স্পোর্টস ডেস্ক, ২৭ মার্চ ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): স্বপ্নপূরণ হলো না বাংলাদেশের। ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ খেলা ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর আগমনে ভারতকে হারানোর যে স্বপ্ন দেখেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সুযোগের পর সুযোগ নষ্ট করায় সেই স্বপ্ন রূপ নিলো বিষাদে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। স্বাগতিক দলের বিপক্ষে প্রথমার্ধে দাপট দেখিয়েই খেলে বাংলাদেশ। তবে সুযোগের পর সুযোগ নষ্ট করায় ০-০ সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ ও ভারত।
দ্বিতীয় আর্ধেও একের পর এক সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ। গোলমুখ খুলতে পারেননি হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ। ভারতকে রুখে দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। শিলংয়ে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি গোলশূন্য (০-০) ড্র হয়েছে।
ম্যাচ শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মেলে বাংলাদেশের। ভারতের গোলরক্ষক বিশাল কাইথ গোলপোস্ট ছেড়ে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন মজিবুর রহমান জনির পায়ে। কিন্তু বাংলাদেশের মিডফিল্ডার করেন হতাশ। ফাঁকা পোস্ট পেয়েও ডি-বক্সের ভেতরে ডানদিক থেকে জালের বাইরের দিকে শট মারেন তিনি।
নবম মিনিটে আরও একবার সুযোগ হাতছাড়া করে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। উইঙ্গার শেখ মোরসালিনের ক্রসে বক্সে ফাঁকায় থাকা আরেক উইঙ্গার শাহরিয়ার ইমনের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় পোস্ট ঘেঁষে।
১৫তম মিনিটে অবিশ্বাস্যভাবে আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় সফরকারীদের। মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর কর্নার কিকের পর বল লুফে নেন কাইথ। ভারতের গোলরক্ষক কিক নিলে সামনে থাকা ডিফেন্ডার মোহাম্মদ শাকিল তপুর গায়ে লেগে বল চলে যায় পেছনে। বক্সের বাম দিকে ফাঁকা পোস্টের সামনে বল পান মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয়। তার গড়ানো দুর্বল শট গোললাইনে আটকে যায় ডিফেন্ডার শুভাশী বোসের পায়ে।
দুই মিনিট পর বামপ্রান্ত থেকে মোরসালিন করেন নিখুঁত ক্রস। ভারতের ডি-বক্সে একদম অরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন ইমন। কিন্তু বলে ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতেই পারেননি তিনি। আরেক দফা আক্ষেপে পুড়তে হয় বাংলাদেশকে।
একগাদা সুযোগ হারানোর পর ২১তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক ও ডিফেন্ডার তপু বর্মণ।
আরেক ডিফেন্ডার রহমত মিয়া আর্মব্যান্ড নিয়ে মাঠে নামেন। বাংলাদেশের পক্ষে আজ অভিষেক হওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা ফুটবলার হামজা চৌধুরি প্রথমার্ধে বেশ প্রাণবন্ত ছিলেন। বাংলাদেশের চারটি কর্নারই তিনি নেন। প্রতিপক্ষের আক্রমণ যেমন রুখেছেন তেমনি বাংলাদেশের আক্রমণেও সহায়তা করেছেন। হামজার কয়েকটি থ্রু পাস বাংলাদেশের আক্রমণে সহায়তা করেছে বিশেষভাবে।
স্বাগতিক দল হলেও ভারত প্রথমার্ধে আক্রমণ ও গোলের সুযোগে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। অবসর ভেঙে ফেরা সুনীল ছেত্রী প্রথমার্ধে বাংলাদেশের রক্ষণে তেমন ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রথমার্ধে ভারতের উল্লেখযোগ্য আক্রমণ ৩১ মিনিটে ভারতীয় গোলরক্ষকের বাড়ানো বলে দ্রুতগতির আক্রমণে ডান প্রান্ত থেকে ক্রস ভারতীয় ফরোয়ার্ডের হেড বাংলাদেশের ডিফেন্ডার গোললাইন সেভ করেন ফিরতি বলে ভারতীয় ফুটবলার জোরালো শট নিতে পারেননি ফলে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুলের সেভ করতে অসুবিধা হয়নি। ৪১ মিনিটে গোলরক্ষককে ১:১ পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি জনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। তবে ৪৭ মিনিটে ডিফেন্সিভ ম্যাজিক দেখান হামজা। বাঁ উইং চিরে বল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিলেন ভারতের লিষ্টন। বেশ দূর থেকে দৌড়ে এসে তাঁকে ট্যাকল করেন হামজা। লিস্টন দৌড়ে ভেতরে ঢুকলে বিপদ হতে পারত বাংলাদেশের।
৫৫ মিনিটে বাঁ প্রান্ত চিরে আবারও দৌড় শুরু করেছিলেন ভারতের মিডফিল্ডার লিস্টন। জনি পেছন থেকে গিয়ে বল দখলে নিয়েও রাখতে পারেননি। লিস্টনের চ্যালেঞ্জের সামনে তাঁকে দুর্বল লেগেছে। লিস্টন বক্সে ক্রস করার পর সুনীল ছেত্রী লাফালেও হেডে বল পাননি।
৭০ মিনিটে মাঝমাঠে আপুয়িয়াকে অবৈধ চ্যালেঞ্জে ফাউল করায় হলুদ কার্ড দেখলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার হৃদয়। ধীর গতি চলতে থাকে ম্যাচ। তাই ৭৮ মিনিটে মোরসালিন ও হৃদয়কে তুলে দুই মিডফিল্ডার মোহাম্মদ সোহেল ও সোহেল রানাকে মাঠে নামান বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
পরিবর্তন আনে ভারতও। ৮৫ মিনিটে ডিফেন্ডার শুভাশীষ ও স্ট্রাইকার ছেত্রীকে তুলে ইরফান ও আশিককে মাঠে নামিয়েছে ভারত। ইরফান ফরোয়ার্ড ও আশিক মিডফিল্ডার। ৮৪ মিনিটে বক্সে হেড থেকে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ছেত্রী।
দ্বিতীয়ার্ধের নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হলে অতিরিক্ত সময় পায় ৫ মিনিট। চতুর্থ মিনিটের শেষ দিকে বক্সের বাঁ দিকে বল পেয়ে পোস্টের বাইরে উড়িয়ে মারেন রাকিব। শেষ সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে দুই দল।
Leave a Reply