শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তান ভারত সীমান্তে মোতায়েন করেছে ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্র : ভারতের সামরিক শক্তিকে ধ্বংস করতে পারবে এটি

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫
  • ৮ সময় দেখুন

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ১৪ মার্চ ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): ভারতকে মোকাবিলা করার জন্য পারমাণবিক হাতিয়ার এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্রটি। পাকিস্তান নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পরিসীমা ৪০০ কিলোমিটার এবং এটি উন্নত এভিওনিক্স ও নেভিগেশন ব্যবস্থায় সজ্জিত। এটি অনন্য ফ্লাইট পথে উচ্চ নির্ভুলতার সাথে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ভারত সীমান্তে এগুলো মোতায়েন করেছে পাকিস্তান।

 

পাকিস্তানের ‘ফতে টু’ স্বল্পমাত্রা ক্ষেপণাস্ত্র ভারতকে ভাবিয়ে তুলছে। কিছুদিন আগে নিয়ন্ত্রণরেখার ও পারে ‘ফতেহ টু’ নামের স্বল্পপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (শর্ট রেঞ্জ ব্যালেস্টিক মিসাইল বা এসআরবিএম) মোতায়েন করে ইসলামাবাদ। একে নয়াদিল্লির ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে মস্কোর তৈরি ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর উপর মূলত ভরসা রেখেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। বর্তমানে এর তিনটি ইউনিট মোতায়েন রয়েছে পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০-এর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

 

অন্যদিকে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৪০০’-এর ওপর মূলত ভরসা রেখেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। বর্তমানে এর তিনটি ইউনিট মোতায়েন রয়েছে পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে।

 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রথম পরীক্ষা চালান পাকিস্তানের সেনাকর্মকর্তারা। গত বছরের মে মাসে সৈনিকদের এ অস্ত্রটি চালানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। বিশেষ ধরনের একটি গাড়ির ওপরে লঞ্চারে ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে রাখা হয়েছে। ফলে যুদ্ধের সময়ে দ্রুত একে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারবে পাকিস্তান আর্মি। ওই গাড়ি এবং লঞ্চার ইসলামাবাদকে চীনা প্রতিরক্ষা সংস্থা সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে।

 

ইসলামাবাদের দাবি, বর্তমান সময়ের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর ‘অ্যান্টিডট’ হিসেবে এ অস্ত্রটিকে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ চোখের নিমেষে ‘এস-৪০০’ র কবচ ভেদ করে ভারতীয় সীমান্তবর্তী সেনা ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ হানতে পারবে ‘ফতেহ টু’।

 

এ ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে জানা গেছে। যুদ্ধের সময়ে এর সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ সেতু, সেনাছাউনি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টার, এমনকি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ওড়ানো যাবে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।

 

‘এস-৪০০’কে ধ্বংস করার কথা মাথায় রেখেই নাকি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘ফতেহ টু’ নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে পাক সেনাসদর দপ্তর।

 

চলতি বছরের ৩ মার্চ ‘ফতেহ টু’ নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসির কাছে মোতায়েনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। এর সাহায্যে পাক সেনারা যে ভারতের মজবুত প্রতিরক্ষার বেড়াজাল ভাঙতে চাইছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শাহবাজ শরিফ সরকারের এ সিদ্ধান্ত ভারতীয় উপমহাদেশে অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় হাওয়া দিল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

 

পাকিস্তানের সরকারি সংস্থা ‘গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিফেন্স সলিউশন’-এর (জিআইডিএস) হাত ধরে জন্ম হয়েছে ‘ফতেহ টু’র। এর আগে ‘ফতেহ-১’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে এই সংস্থা, যার পাল্লা ছিল মাত্র ১৪০ কিলোমিটার। ওই সময় থেকেই হাতিয়ারটির পাল্লা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

 

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস’ বা আইএসপিআর-এর মতে, ‘এ ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে অত্যাধুনিক দিক নির্দেশকারী ব্যবস্থা (নেভিগেশন সিস্টেম)। এটিকে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যে কায়দায় এটি উড়বে, তাতে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষেই একে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।’

 

ভারতের আকাশকে সুরক্ষিত করতে ২০২১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ‘এস ৪০০’ প্রতিরক্ষা চুক্তি করে নয়াদিল্লি। দেশটির বিমান বাহিনীর হাতে অস্ত্রটি তুলে দিতে ৫৪০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে ভারতকে।

 

বিশ্লেষকদের দাবি, এস-৪০০ ভেদ করার একমাত্র উপায় হল, ‘ফতেহ টুর’ মতো কয়েকশো ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে ছুড়ে দেওয়া। পাশাপাশি ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসবে আত্মঘাতী ড্রোন। সেক্ষেত্রে সব কটি ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করা ‘এস-৪০০’র পক্ষে সম্ভব হবে না। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এই গলদ গত দেড় বছর ধরে চলা পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে নজরে এসেছে। পাক জেনারেলরা সেটাই ভারতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

 

বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ‘এস-৪০০’কে সরাসরি নিশানা না করে এর সঙ্গে যুক্ত রাডার এবং কমান্ড-কন্ট্রোল সিস্টেমকে ওড়ানোর ছক কষতে পারে পাকিস্তান বাহিনী। তাতে সাফল্য পেলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি হাতে থাকা সত্ত্বেও সেটিকে ব্যবহার করতে পারবে না বিমান বাহিনী। একেও নয়াদিল্লির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।

 

ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফতেহ টু’র নিশানায় রয়েছে পাঞ্জাব এবং রাজস্থানের বিমান ঘাঁটি। নিশনায় থাকবে বলে জানা গেছে জম্মু-কাশ্মীরে সিন্ধু নদীর একাধিক শাখা নদীতে ভারতের নির্মিত বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। ক্ষেপণাস্ত্রটি ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে পাকিস্তান যা ভারতের চোখে হুমকি এবং রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর