স্পোর্টস ডেস্ক,০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): ধর্ষণ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ তুলে নিজের ভ্যারিফায়েড ফেজবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে ফুটবল অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়, জাপান প্রবাসী মাতসুশিমা সুমাইয়া। ফেজবুক পেজে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর এবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন দাবি করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মাতসুশিমা সুমাইয়া।
বুধবার দুপুরে রাজধানী মতিঝিল থানায় জিডি করেন তিনি। জিডি করার সময় সুমাইয়ার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমী।
বেশ কয়েকদিন ধরে জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের বিরোধ নিয়ে আলোচনা চলছে ফুটবল অঙ্গনে। বাটলারের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিলো না দলের কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের সঙ্গে। যে কারণে তারাসহ পুরো নারী ফুটবল দল অনেকটা বিদ্রোহ করে বসে আছেন।
সমস্যা সমাধানে বাফুফে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। এরই মধ্যে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন সুমাইয়া।
জাপান প্রবাসী সুমাইয়া ওই পোস্টে গেল কয়েকদিনে অনেকবার হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছেন দাবি করেন। সে সঙ্গে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, কেন তিনি একজন ফুটবলার হতে গেলেন? কারণ, একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে যেভাবে দেশকে পাশে পাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে পাচ্ছেন না।
সুমাইয়া লিখেছেন,‘আসসালামু আলাইকুম। আমি মাতসুশিমা সুমাইয়া, বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রী হিসেবে ইন্টার স্কুলে খেলা থেকে শুরু করে মালদ্বীপে লিগ জয় এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশের হয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের অভিজ্ঞতা আমার জন্য ছিল অম্ল-মধুর ছিল।’
কেন ফুটবলকে বেছে নিয়েছেন সেটার কথা উল্লেখ করে সুমাইয়া লিখেছেন, ‘যখন এই পথ বেছে নিয়েছি, আমার স্বপ্ন ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা; যাদের বাবা-মা চান তারা শুধু পড়াশোনাতেই মনোযোগী থাকুক। আমি দেখাতে চেয়েছি আবেগ এবং সংকল্প যেকোনো প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিতে পারে। কিন্তু আজ আফসোস করে বলতে হচ্ছে- আমার শিক্ষা, পরিবার, ঈদ– সবকিছু এমন একটি দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি, যারা আমাদের সংগ্রামগুলোর প্রশংসা করতে জানে না।’
কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে চিঠি আকারে সেটা বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে দিয়েছেন নারী ফুটবলাররা। শোনা যাচ্ছে, চিঠিটি ইংরেজিতে লিখে দেওয়ার কাজটি করেছেন সুমাইয়া। তার পর থেকেই ধর্ষণ আর হত্যার হুমকি পাচ্ছেন তিনি।
চিঠির বিষয়টি উল্লেখ করে সুমাইয়া আরও লিখেছেন, ‘ফুটবল খেলার জন্য বাবা-মায়ের সঙ্গে লড়াই করেছি এই বিশ্বাসে যে, হয়তো একদিন দেশ আমার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। কেউ আসলে ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে না। যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সে সম্পর্কে নিজের এবং সতীর্থদের নিয়ে ইংরেজিতে একটি চিঠি লেখার ন্যূনতম দক্ষতা আমার আছে। গত কয়েকদিন ধরে আমি অগণিত মৃত্যু এবং ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি– যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা আমাকে এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে যা কল্পনাও করিনি। জানি না এই মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে কতদিন লাগবে। তবে এটা জানি, কেবল স্বপ্ন পূরণের জন্য কাউকে যেন এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।’
Leave a Reply