স্পোর্টস ডেস্ক, ২০ ডিসেম্বের২০২৪ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): দীর্ঘদিনের অপেক্ষ শেষ হলো দেশের ফুটবল সমর্থকদের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটির হয়ে মাঠ মাতানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আর বাধা নেই। বৃহস্পতিবার বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফার থেকে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই নিজের ইনস্টাগ্রাম আইডিতে একটি ছোট্ট ভিডিও বার্তা দিয়ে নিশ্চিত করেন হামজা নিজেই।
এ দিনই লন্ডনের এক গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় হামজার একটি সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার এক ফাঁকে বাংলাদেশে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা বলেন। এ সময় লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠে নামতে মুখিয়ে আছেন বলেও জানান তিনি।
ইংল্যান্ডের লাফবোরোতে জন্ম হামজা চৌধুরীর। স্বাভাবিকভাবেই ফুটবলে হাতেখড়ি হওয়ার পর থেকে তার স্বপ্ন ছিল নিজের জন্মভূমিকে প্রতিনিধিত্ব করা। খেলেছেন দেশটির বয়সভিত্তিক দলেও। তবে ধীরে ধীরে নিজের স্বপ্নকে পরিবর্তন করেন তিনি। তাতে ইংল্যান্ডের হয়ে নয়, মায়ের জন্মভূমি বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন।
সেই গল্পই শুনিয়েছেন ভার্সাস ইউকে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, ‘অনেকের জন্য, বিশেষ করে যারা ফুটবল খেলে, তারা যে দেশে জন্ম গ্রহণ করেছে সেই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখে এবং আমার জন্য এটি ইংল্যান্ড ছিল, তাই আমি যুব দলের হয়ে খেলার পর এটি লক্ষ রেখেছিলাম। এমনকি যুব পর্যায়ে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করাও ছিল সম্মানের। তবে সময় যত যেতে লাগল, ততই গুঞ্জন উঠতে লাগল যে, আমি সিনিয়র পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারি এবং এর পর থেকেই আমি এটা নিয়ে ভাবতে শুরু করি। পাশাপাশি আমার পরিবার একাধিকবার চেষ্টা করেছে আমাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য রাজি করাতে। বিষয়টি এমন নয় যে আমি কখনো ভাবিনি সেখানে খেলার কথা। এটা সব সময়ই আমার মনে ছিল। পরে আমি ইংল্যান্ডে এবং বাংলাদেশে আমার পরিবারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কথা বলি। এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত যা নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত এবং ভবিষ্যতে কী হবে তার জন্য আমি উন্মুখ হয়ে আছি।’
এ সময় বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা নিয়ে লেস্টারের এই মিডফিল্টার বলেন, ‘অনেকে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধান খেলা ক্রিকেট, তাই এই খেলাতেই দেশের মানুষের বেশি সমর্থন। কিন্তু আমি মনে করি, এটি খানিকটা ভুল ধারণা। আমার মনে হয়, জাতি হিসেবে এটাই ঐ খেলা যেখানে তারা সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে। তবে তারা (দেশের মানুষ) যে খেলাটিকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে তা অবশ্যই ফুটবল। জাতীয় দল (বাংলাদেশ) এখন পর্যন্ত তেমন সাফল্য পায়নি। কিন্তু যদি বিশ্বকাপের সময়টা দেখা হয়, বাংলাদেশের অর্ধেক আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেছিল আর অর্ধেক ব্রাজিলকে সমর্থন করছিল। এটা সত্য ঘটনা, এটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটি বাস্তব প্রতিদ্বন্দ্বিতা! এটা আমার কাছে লেগেছে পাগলামি, কিন্তু যেমনটা আমি বলেছি, সেখানকার সমর্থকদের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ব্যাপক।’
পারিবারিক ভাবে হামজার পরিবার সিলেটের হবিগঞ্জের বাসিন্দা। পুরোদমে ফুটবল ক্যারিয়ারে পদযাত্রার আগে প্রায় প্রতি বছরই এক বার হলেও বাংলাদেশে আশা হতো হামজার। মাঝে মাঝে বছরে দুই বারও আসত। তবে ১০ বছর ধরে এ দেশে পা পড়েনি হামজার। ফুটবলের কঠিন সময়সূচি তাকে আটকে রেখেছিল এ দেশে আশার থেকে। দীর্ঘ সময় পর এবার আসবেন দেশের জাতীয় দলের ফুটবলার হিসেবেই।
নিজের তরুণ বয়সে বাংলাদেশে করা সফর নিয়ে বলেন, ‘নিয়মিত সেখানে যাওয়া আমাকে অল্প বয়সে কৃতজ্ঞতা জানাতে শিখিয়েছে। ঐখানে আমি এমন অনেককে দেখেছি যাদের আমার মতো এত কিছু ছিল না। তবে যা ছিল তা নিয়েই তারা খুশি থাকত। সেখানকার মানুষ নিজেদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে জানে। এটাই আমাকে কৃতজ্ঞ থাকার প্রকৃত অর্থ শিখিয়েছে। আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিলাম যে যুক্তরাজ্যে বেড়ে উঠেছি সে অনুযায়ী অনেক কিছু অর্জন করেছি বা পেয়েছি। যেগুলো আমরা প্রয়োজনীয় বলে মনে করি বিন্তু আসলে তা নয়। আমি বাংলাদেশে এমন অনেক লোককে দেখেছি, যাদের আমি তখন ভেবেছিলাম তাদের ন্যূনতম কিছু নেই। কিন্তু তারা খুশি ছিল। যেটা আমাকে কম বয়সেই একটা মূল্যবান শিক্ষা দিয়েছিল।
Leave a Reply