রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

৬১.১২ টাকায় কিনে ৯.৮ টাকায় গ্যাস দিচ্ছি, তার পরেও আন্দোলন : গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বললেন, প্রধানমন্ত্রী

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯
  • ৪৪৪ সময় দেখুন

চীন সফর নিয়ে আজ সোমবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতে রান্নার গ্যাসের দাম কমানোর বিষয়টি যারা তুলছেন, তারা যেন সে দেশে গ্যাসের দামের বিষয়টি বিবেচনায় আনেন।

সম্প্রতি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাসের দাম গড়ে ৩২.৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। গ্যাসের আবাসিক সংযোগের বিল বেড়েছে ১৭৫ টাকা। আর এই দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রবিবার আধাবেলা হরতাল করেছ বামপন্থী দলগুলো।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল এই দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পরদিন ভারতে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম শতাধিক রুপি কমানোর বিষয়টি নিয়েও জানতে চান একজন সাংবাদিক।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে এলএনজি আমদানি করতেই হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পায়ন আর প্রবৃদ্ধির জন্য এটা জরুরি। আর অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে মেনে নিতে হবে। বিদেশেও যারা এলএনজি আমদানি বা গ্যাস আমরাদি করে। এটা তারা মেনে নেয়। প্রতি ঘনমিটার এলএনজির আমদানি খরচ ৬১.১২ টাকা এবং দাম বাড়ানোর পরও সরকার তা দিচ্ছে ৯.৮ টাকায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার পরেও আন্দোলন!’।

দাম বাড়ানোর পরও ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে আন্দোলন যখন করছে, এক কাজ করি, যে দামে কিনব, সে দামে বেচব। ৬১ টাকায় নেব। তাহলে আমার কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।’

এলএনজি আমদানির বিকল্প নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ করতে চাই। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে চাই, শিল্পায়ন করতে চাই।’

বামদের হরতাল ও তাতে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কটাক্ষ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বাম আর ডান মিলে গেছে। এক সেঙ্গ এই তো, খুব ভালো।’ ‘বহু দিন পরে হরতাল পেলাম, পরিবেশের জন্য ভালো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন চাইলে বর্ধিত দাম মানতে হবে। সেখানে দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে এটা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে দুটো পথ আছে। ‘হয় আমরা এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব তাতে উন্নতি হবে না। আর যদি সত্যিই অর্থনৈতিক উন্নতি চান তো এটা তো মেনে নিতেই হবে।’‘আমরা যদি দেশের উন্নতি করতে চাই এই এনার্জি একটা বিষয়। … আমরা এখন জিডিপি ৮.১ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ আমরা এনার্জির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। বিদ্যুৎ আমদানি বাড়াতে পারলেও বাংলাদেশকে গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। আর এলএনজি আমদানির জন্য খরচও বেশি পড়ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘শিল্পায়ন করতে হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে সার উৎপাদন করতে হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ হতে হলে সরকারকে এলএনজি আমদানি করতেই হবে।’ ২০২৪ সালের মধ্যে সরকার প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে এ নিয়ে যাবে। এ জন্য এনার্জি লাগবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ লাগবে।

গ্যাস আমদানির ওপর সব ধরনের কর মওকুফ করে দেওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্যাসের দামের তুলনাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে আন্দোলন করেছে, বলছেন, ভারতে কমিয়েছে। ভারতে দাম কত গ্যাসের? ভারতে গৃহস্থালীর জন্য গ্যাসের দাম স্থান ভেদে ৩০ থেকে ৩৭ টাকা। বাংলাদেশ দিচ্ছে ১২.৬০ টাকায়। ‘শিল্পে বাংলাদেশে দিচ্ছে ১০.৭০ টাকায়, ভারতে দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা।’

‘সিএনজি আমাদের এখানে ৪৩ টাকা, ওখানে (ভারতে) ৪৪ টাকা।’‘বাণিজ্যিকে আমরা দিচ্ছি ২৩ টাকায়, ভারতে ৬৫ টাকা।’‘ভারতে প্রতি বছর দুই বার গ্যাসের দাম সমন্বয় হয়। এটা তারে নীতি। ১ এপ্রিল একবার, অক্টোবরে গিয়ে আবার পর্যালোচনা। তারা সমন্বয় এর কথা বলে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের একটি ভুলের কারণে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান, ২০০৪-২০০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাসে ভারত মিয়ানমার, জাপান, চীন সবাই মিলে বিনিয়োগ করেছিল। ভারত এই গ্যাস নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন করে।

‘কিন্তু খালেদা জিয়া সরকার এই পাইপলাইনে গ্যাস নিতে দেয়নি। আমি থাকলে কী করতাম? পাইপ লাইনে তো গ্যাস নিতে দিতামই আমি আমার ভাগটা রেখে দিতাম, যে আমাকে দিয়ে তারপর নিতে হবে। তখন যদি মিয়ানমার থেকে পাইপ লাইনে গ্যাস আনতে পারতাম আর অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে পারতাম তাহলে আমাদের এখন এলএনজি আমদানি না করলেও চলত। কারণ সেখানে প্রচুর গ্যাসের রিজার্ভ আছে। দেশের কতগুলি বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব যদি ভুল করে বা সরকার যদি ভুল করে তার খেসারত জনগণকে দিতে হয়।’

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর