স্পোর্টস ডেস্ক, ২৩ মার্চ ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): টানা দুইবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশ। আর দুইবারই চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ২০২২ ও ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার জেতেন ঋতুপর্ণারা। সর্বশেষ আসরে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন এই ফুটবলার। আর সেই ফুটবলারই এখন ভুগছেন অনুশোচনায়।
২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নিজ জেলা রাঙামাটিতে রাজকীয় সংবর্ধনা পেয়েছিলেন ঋতুপর্ণাসহ আরও ৪ ফুটবলার। এরপর প্রতিশ্রুতি হিসেবে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পেয়েছিলেন বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা ও বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস। তবে সেই আশ্বাস ২০২৪ সাফ জয়ের পরও বাস্তবে রূপ নেয়নি।
দীর্ঘদিন পর প্রশাসন যখন ঋতুপর্ণার বাড়ি নির্মাণ করতে যাচ্ছে, আর তখনই এসেছে বাধা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন সাফজয়ী এই ফুটবলার। যেখানে নিজ জেলার মানুষের কাছে মূল্যায়ন না পাওয়া ও অনুশোচনায় ভোগার কথা জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২২ মার্চ) সকালে ঋতুপর্ণার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লম্বা একটি পোস্ট করা হয়। পাঠকদের সুবিধার্থে ঋতুপর্ণার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো। ‘২০২২ সালে প্রথমবারের মতো যখন সাফ চ্যাম্পিয়ন হই, তখন পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচজন সদস্য ছিলাম। আমি আর রুপনা চাকমা রাঙামাটি জেলার আর বাকি তিনজন খাগড়াছড়ি। রাঙামাটি জেলা আমাদের পাঁচজনকে রাজকীয়ভাবে সংবর্ধনা এবং সম্মানিত করেন। সেসময় স্বয়ং জেলা প্রশাসক আমার নিজ গ্রামের বাড়িতে এসেছেন আমার ঘরবাড়ি ও যাতায়াতের অবস্থান দেখে যান। সেবার রুপনা চাকমাকে বাড়ি নির্মাণ করে দেন জেলা প্রশাসন। যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সবই বাস্তবায়ন করে দেন।’
সেসময় জেলা প্রশাসন ঋতুপর্ণার চাওয়াও জানতে চেয়েছিল। তিনি আরও লেখেন, ‘আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো আমার কি চাওয়া পাওয়া আছে প্রশাসন থেকে, তখন আমি চেয়েছিলাম আমার এলাকাবাসী সুবিধার্থে যাতায়াতের জন্য রাস্তা। কারণ আমার বাড়ির যাওয়ার রাস্তা নেই। আমার নিজের জন্য কিচ্ছু চাইনি। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিলেন রাস্তা সংস্কার করে দেবেন। সেই সঙ্গে আমাকে জায়গাসহ বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাকে ডেকে নিয়ে ঘাগড়া বাজারে খাস জায়গা নির্ধারণ করেছেন এবং জায়গাটা আমারও পছন্দ হয়, সবকিছু ঠিকঠাক হয়। যা হোক রুপনার সবকিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আমার মনেও বিশ্বাস, আশা ছিল প্রশাসনের কাছ থেকে আমারও সবকিছু বাস্তবায়ন হবে।’
তবে এর কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি জানিয়ে ঋতুপর্ণা লেখেন, ‘দুঃখের বিষয় আমার কোনো কিছু বাস্তবায়ন হয়নি। যা হোক ওই বিষয় নিয়ে আমি আর মাথাঘামাইনি, অনুশোচনাও হয়নি। ২০২২ গেল সবকিছু ভুলে গেলাম আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে মনোযোগী হই।’
তিনি লেখেন, ‘২০২৪ দ্বিতীয়বারে মতো বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় পুরস্কার জিতেছি। দ্বিতীয়বারের মতো দেশবাসী মিলে আনন্দ, উল্লাস ভাগাভাগি করে উদ্যাপন করি। একইভাবে ২০২২ সালে যেভাবে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন, ঠিক দ্বিগুণ সেভাবেই আমাদের রাজকীয়ভাবে সংবর্ধনা এবং সম্মানিত প্রদান করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। ২০২২ সালে যে আমাকে মিথ্যা আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই নতুন বাংলাদেশ, এই নতুন প্রশাসনের কাছ থেকে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বিগত ২০২২ সালে জায়গাসহ বাড়ির করে দেওয়া এবং যাতায়াতের জন্য রাস্তা সংস্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটা বাস্তবায়ন হবে।’
কিছুদিন আগে চাওয়া অনুযায়ী সেই রাস্তা নির্মাণের বরাদ্দ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন ঋতুপর্ণা লেখেন, ‘দেরিতে হলেও কিছুদিন আগে আমাকে ইউএনও মহোদয় কাজী আতিকুর রহমান স্যার খুশির সংবাদটি জানিয়ে দেন, আমার এলাকার গ্রামবাসীর জন্য রাস্তা নির্মাণ বাবদ রাঙামাটি জেলা পরিষদ হতে ইতিমধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এক মাস আগে জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য রাস্তাটি পরিদর্শনও করেছেন। ইউএনও স্যারের ওনার নিজ উদ্যোগে আমার বাড়িতে সুপেয় পানির জন্য নিজেই গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছেন।’
তবে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন জানিয়ে এই নারী ফুটবলার লেখেন, ‘ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে একটা ঘর নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রশাসন রাস্তা এবং জায়গাসহ বাড়ির করে দেওয়ার অনুমোদন সম্মতি দিয়েছেন। আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রশাসনকে, খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম সংবাদটা শুনে। এত দিন পর প্রশাসন আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার সদয় সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে আমি শুনতে পাচ্ছি কোনো এক মহল থেকে বাধা আসতে শুরু করেছে, তাহলে কি আমার ঘাগড়ায় কি কোনো ঠাঁই নেই?’
আক্ষেপ করে ঋতুপর্ণা আরও লিখেছেন, ‘এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে আমি দেশের জন্য খেলছি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, নিজে জেলার মানুষের কাছে মূল্যায়নটা পেলাম কই?’
Leave a Reply