শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০২:২৮ অপরাহ্ন

সংস্কার কর্মকাণ্ডে অগ্রগতি আশানুরূপ নয় : কর্নেল অলি

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৮১ সময় দেখুন

ঢাকা, ০৫ অক্টোবর  ২০২৪ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট):  লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় দুই মাস সময় পূর্ণ করেছে। এই সরকারের কাছে জনগণের আশাআকাঙ্খা অনেক। তবে এখনো মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কাজ করছে। কারণ সংস্কার কর্মকাণ্ডে অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।”

 

তিনি বলেন, “কোনো অবস্থাতেই দেশের মানুষকে নিরাশ করা যাবে না। আমাদের সবাইকে সরকারকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।”

 

প্রয়োজনে দক্ষ, শিক্ষিত এবং উপযুক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে উপদেষ্টাদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত রাজনীতিতে অভিজ্ঞজনের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে আমরা এই সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সংস্কার বাস্তবে রূপ দিতে হবে। এছাড়া প্রত্যেকের মানসিক সংস্কারও প্রয়োজন।”

 

শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কর্নেল অলি।

 

তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে মনে হয়, তাদের অনেকেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি দুর্বল। অথচ ঐ আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার গণআন্দোলনের সময় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বিশেষত গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রকে নিশ্চিহ্ন ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন পদ্ধতি ধ্বংস করেছে। সর্বস্তরে আত্মীকরণ ও দলীয়করণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম-খুন, জনগণের ওপর নির্যাতন-জুলুম, মেগা প্রকল্পের আড়ালে ব্যাপক দুর্নীতি, বিশাল ঋণ নিয়ে লুটপাট এবং বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা পাচার এসব নজিরবিহীন অপরাধ সংঘটিত করেছে। সুতরাং এই দেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।”

 

কর্নেল অলি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তাদের নিবন্ধন বাতিল করার জন্য আরও কত মানুষ শহীদ হওয়ার প্রয়োজন ছিল? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত। অন্যথায় শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে। সময় সীমিত, দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং আবেগের পরিবর্তে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিন।”

 

অলি বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে শেখ মুজিবুর রহমান স্বেচ্ছায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশেও তার স্বেচ্ছাচারী শাসনে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বারবার নিগৃহীত হয়েছেন। তিনি কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক বা জাতির পিতা হতে পারেন না। তার একনায়কসুলভ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাজারও মানুষ খুন এবং গুম হয়েছেন। কিন্তু তবুও তার প্রতি একটি ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। এখনও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম বিদ্যমান রয়েছে। এই নামগুলো অবিলম্বে পরিবর্তন করা জরুরি এবং ব্যক্তিপূজার অপসংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি, আমরা আশা করি, সরকার বিভিন্ন ধরনের টাকার নোট থেকেও যথাশীঘ্র শেখ মুজিবের ছবি অপসারণ করবে।”

 

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে গিয়ে, ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন হয়, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তাতে এ যাবৎ সর্বমোট ১৫৮১ জন শহীদ হয়েছে। সরকারের উচিত, কত জন ছাত্র-ছাত্রী, কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শহীদ হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের কত জন শহীদ হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ কত জন শহীদ হয়েছে- তা জনসম্মুখে তুলে ধরা উচিত। এছাড়া অনুরূপভাবে আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা প্রয়োজন। এতে জনগণ একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাবে। এলডিপির শহীদ হয়েছে ৪ জন, অঙ্গহানি হয়েছে চার জন, আহত হয়েছে ১৫ জন।

 

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, “স্বৈরাচারী ও খুনী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়, যেসব উপদেষ্টা বা কর্মকর্তা গণতন্ত্র হত্যা, মানবাধিকার লংঘন এবং দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য দায়ী, তাদেরকে এখন পর্যন্ত কেন গ্রেপ্তার করা হয় নাই?”

 

এসময় ড. মশিউর রহমান, কবির বিন আনোয়ার এবং তথাকথিত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিক, ‘যিনি সেনা বাহিনীর কলঙ্ক হিসেবে পরিচিত’- তাদের গ্রেপ্তার না হওয়ার কথা উল্লেখ করেন অলি।

 

এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, “৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ইউনিফর্ম পরা কয়েকশ ব্যক্তি দৌড়ে ভারতের বিশেষ বিমানের মাধ্যমে পালিয়ে যায়। এরা কারা, তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।”

 

‘দেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৮-১০ জন বড় ক্রিমিনাল রয়েছে। যারা একনায়কত্ব কায়েম করার জন্য শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। এই ক্রিমিনালগুলো দেশের ব্যবসাবাণিজ্য এবং অর্থনীতি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেছে, বড় বড় প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেছে। এদের মধ্যে অনেকে অনৈতিক কাজেও লিপ্ত ছিল। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দেশের অর্থনীতি এবং গণতন্ত্রকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। রাজনীতিবিদরা তাদের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। অন্যদিকে তাদের চুরির টাকাও বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলোকে ঋণগ্রস্ত করেছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, রাজনীতিবিদ, এমপি এবং মন্ত্রীদেরকে তাদের কেনা গোলাম হিসেবে ব্যবহার করেছে। যার কারণে এদের কর্মকাণ্ডগুলো প্রকাশ্যে আসছে না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার কয়েকদিন আগেও এই ক্রিমিনাল ব্যবসায়ীরা তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এরা দেশদ্রোহী, জনগণের শত্রু এবং মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে।” বলেন কর্নেল অলি।

 

তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে চৌকস অফিসারদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তদন্তের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে এবং যারা বিদেশে অবস্থান করছে তাদেরকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আগামীতেও দুর্নীতি বন্ধ হবে না।”

 

অলি আহমদ আরও বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অহেতুক সময় ক্ষেপণ করছে। তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করছে। কারণ প্রায় দুই মাস সময় অতিক্রান্ত করার পরও এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের আদালতগুলোতে স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োগ দেওয়া পিপিরা কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও আওয়ামী পন্থী বিচারকরা নিজ নিজ অবস্থানে বহাল তবিয়তে আছে। ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর