রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন

মেঘনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে রুপালী ইলিশ : দাম আকাশ ছোঁয়া

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯
  • ১৯৪ সময় দেখুন

জেলার মেঘনা নদীর জল সীমায় ইলিশ মাছ পড়া শুরু হয়েছে। গত ক”দিনের টানা বর্ষণে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে রুপালী ইলিশ। তবে সংখ্যায় কম হলেও মূল্য বেশি থাকায় জেলেরা পুষিয়ে উঠছেন। আর সামনের পূর্ণিমার জোকে কেন্দ্র করে আরো ইলিশের আমাদনী বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর দীর্ঘ খরা কাটিয়ে ইলিশের দেখা পাওয়ায় হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। বদলে গেছে জেলে পল্লীগুলোর চিত্র। আর সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন মাছের ঘাট, আড়ৎ, পাইকারী ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক ও দর কষাকষিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন ইলিশের বাজার।

জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম বাসস’কে জানান, এবছর মৌসুমের প্রথম থেকেই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। কাঙ্খিত ইলিশ না মিল্লেও জেলেরা শুন্য হাতে ফিরছেনা। । যেহেতু ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত গভীর সমূদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই জেলার ৩ লাখের উপরে সকল জেলে মেঘনায় ছুটছেন। জালে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা খুশি । সামনের বর্ষণে আরো বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে জানান জেলেদের এ নেতা।

অন্যদিকে মৎস্য বিভাগ বলছে, বৃষ্টির উপর নির্ভর করছে ইলিশের গতিপথ। যেহেতু বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে ইলিশের আমদানিও বাড়ছে। পুরো মৌসুম জুড়ে এবার ইলিশের সরবরাহ থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা মৎস্য বিভাগের।

সদর উপজেলার মেঘনা পাড়ের ভোলার খাল মাছ ঘাটের আড়ৎদার মো: আল-আমিন বাসস’কে জানান, গত ৭দিন ধরে ইলিশ মাছের আমদানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন নৌকা-ট্রলারে করে ঘাটে মাছ আসছে। তবে দাম একটু বাড়তি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়াকে তিনি মাছ না পাওয়ার কারণ হিসাবে জানান।

সদর উপজেলার মেঘনার ভোলার খাল মাছের ঘাট, কোরার হাট মাছের মোকাম, তুলাতুলি মাছ ঘাট, বিশ্বরোড মাছের ঘাট, জংশন এলাকার মাছঘাট, ইলিশার মাছ ঘাট, তেতুলীয়ার ভেদুরিয়া মাছঘাট, শান্তির হাটের মাছঘাট, দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, চরফ্যশনের সামরাজ মাছ ঘাট, চেয়ারম্যানের খাল মাছ ঘাট, নুরাবাদের খাল, চকিদারের খালের ঘাট, শশীভ’শনের বকসি ঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মোকামগুলোতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো।

সদরের ইলিশা এলাকার জেলে রহমত আলী, লোকমান মাল, কাসেম মাঝি, ফোকান মাঝি, সেরাফাত হোসেন বাসস’কে বলেন, বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথে ইলিশ বাড়ছে নদীতে। একটি বড় বোট নিয়ে নদীতে গেলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে। খরচ বাদ দিলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো থাকছে নৌকা প্রতি। আর ছোট নৌকায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো থাকছে। এতে করে জেলেদের দেনার দায় কমে আসছে বলে জানান তারা।

এদিকে মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, ১ কেজির উপরের ইলিশ প্রতি হালি (৪টি) বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ৮’শ থেকে ৯’শ গ্রামের হালি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ৫’শ থেকে ৭’শ গ্রামের ইলিশ ৪টি বিক্রি হচ্ছে ১৮’শ থেকে ২২’শ টাকা। ইলিশের আমদানি আরো বাড়লে দাম কমবে বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূশন থানার বকসি মাছ ঘাটের আড়ৎদার মো: নান্নু মিয়া মনে করেন, সরকারের মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়াতে এবছর মৌসুমের প্রথম থেকেই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে জেলেদের লোকসানের মুখে পড়তে হবেনা বলেও জানান তিনি।

এদিকে নদীতে ইলিশ মাছ পড়ার সাথে সাথে বরফকল ব্যবসায়ীদেরও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। নদীতে যাওয়ার সময় জেলেরা বরফ সাথে করে নিয়ে যায়। তাই বরফ উৎপাদনে ব্যস্ত বরফকলের মালিকরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, ইলিশের মৌসুম সাধারণত বর্ষার উপর নির্ভর করে। ইতোমধ্যে টানা বর্ষণ চলছে। আমরা বিভিন্ন স্থানে খবর পেয়েছি, তাতে ইলিশ পড়া শুরু হয়েছে। এবছর জেলায় ৬০ হাজার মে: টন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা চলবে। তাতে আশা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা যাবে। সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি ইলিশ পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর