শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করে ছাত্রশিবিরের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’ প্রকাশ : ছাত্রদলের প্রতিবাদ

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৩১ সময় দেখুন

ঢাকা, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’ যে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে, সেটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এ নিন্দা তীব্র প্রতিবাদ জানান।

 

‘ছাত্র সংবাদ’ নামে মাসিক প্রকাশনাটির ডিসেম্বর সংখ্যায় জনৈক আহমেদ আফঘানি রচিত ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

 

সেই প্রবন্ধে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’

 

প্রবন্ধের এই অংশ উদ্ধৃত করে ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করা এবং ‘পাপকাজ মনে করে’ ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি গর্হিত এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা।’

 

‘প্রকৃতপক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো ধর্মযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশীদের প্রতিরোধের যুদ্ধ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারনের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ।’

 

বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদল বলেছে, ‘দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ।’

 

এতে বলা হয়, ‘কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে এই বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রশিবিরের এরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণার কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।’

 

ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব’ স্লোগান দিয়ে র‍্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয় প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল গ্রহণ করলেও ভেতরে ভেতরে ছাত্রশিবিরের পূর্বসুরী ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মনোভাবই তারা ধারণ করে।’

 

‘লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না’ উল্লেখ করে ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার এডিটরিয়াল পলিসি স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে।’

 

‘আমরা ছাত্রশিবিরকে আহবান জানাচ্ছি, তারা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে। একইসঙ্গে ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর