শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন

মিয়ানমার সরকার সুঠাম নারীদের তালিকা করছে

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২২ সময় দেখুন

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক,০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): সুঠাম ও যুদ্ধে সক্ষম নারীদের তালিকা করছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এবার পুরুষের পাশাপাশি তাদেরও বাধ্যতামূলক সামরিক চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এমন খবর জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি।

 

এক প্রতিবেদন মতে, ইয়াঙ্গুন অঞ্চলে নারীদের নিবন্ধন করে সামরিক চাকরির জন্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। গত সপ্তাহে (২৯ জানুয়ারি) ইরাবতীর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমার জান্তা সরকার ইয়াঙ্গুন অঞ্চলে নারীদের তালিকা তৈরি শুরু করে, যার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের বৃহত্তম শিল্প অঞ্চল হ্লাইং থারিয়ার টাউনশিপ, যেখানে লাখ লাখ নারী কারখানায় কাজ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সব কর্মজীবী নারীদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে।

 

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরোনো সেনা নিয়োগ আইন বাতিল করা হয়। এরপর এখন পর্যন্ত পুরুষ নিয়োগপ্রাপ্তদের ৯টি ব্যাচকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সক্ষম পুরুষদের আটক করে বাধ্যতমূলক সামরিক চাকরিতে নিয়োগের প্রচেষ্টা আরও বাড়ানো হয়েছে।

 

দ্য ইরাবতির এক প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেনা নিয়োগ জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে রাজ্যে রাজ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। মন্দিরের শহরখ্যাত মান্দালয় ও বাগান এলাকা থেকে শত শত তরুণ-তরুণীকে অপহরণ করা হয়েছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা মান্দালয় স্ট্রাইক কমিটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে মান্দালয়ের সাতটি টাউনশিপে শাসকগোষ্ঠী অন্তত ২৩৭ জনকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের বয়স মূলত ২০ ও ৩০-এর কোঠায়।

 

মান্দালয় স্ট্রাইক গ্রুপের একজন কর্মকর্তা জানান, যারা পালানোর চেষ্টা করেছিল এবং আদেশ অমান্য করেছিল, তাদের বন্দুকের মুখে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। জান্তা সেনারা তল্লাশির অজুহাতে রাতের বেলায় বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে, লোকজনকে মারধর ও গ্রেপ্তার করছে। চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে জান্তা মান্দালয়ে অভিযান ও অপহরণ বৃদ্ধি করেছে। শহরের বিভিন্ন চেকপয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ, সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই নিরাপত্তা বাহিনী যানবাহনের লাইসেন্স, মোবাইল ফোন ও ভিপিএন ব্যবহার পরীক্ষা করে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই ঘটনাস্থলেই গ্রেপ্তার করছে। মানবাধিকার সংস্থা আরও জানিয়েছে, তারা (জান্তা) মূলত কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ও ফেরার পথে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করছে। তারা তরুণদের সশস্ত্র সংঘাতে টেনে আনছে। তীব্রতর অভিযানের ফলে সন্ধ্যা ৬টার পর মান্দালয়ের রাস্তাগুলো মূলত জনশূন্য হয়ে পড়ছে।

 

মিয়ানমার, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। বর্তমানে সেখানে গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরাজ করছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশটির বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে এ গৃহযুদ্ধে শুধু দেশটির ভবিষ্যৎ নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও সংকটময় করে তুলেছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছে।

 

মিয়ানমারে কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী, বিশেষ করে আরাকান আর্মি, তাদের নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। তবে এমন একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন অনেক জটিল বিষয়। আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে এটি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অন্যদিকে, এই নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে।

 

বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের মধ্যে আরাকান আর্মি অত্যন্ত শক্তিধর। ফলে জান্তা সরকার আরাকান আর্মির অস্তিত্বকে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। যদিও চীন ও ভারত উভয়ই জান্তা সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে তারা আরাকান আর্মির প্রতি যথেষ্ট আগ্রহও দেখিয়েছে। বিশেষ করে চীন রাখাইনে তার গ্যাস পাইপলাইন ও বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে, সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ হলে তাতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে ভারতও রাখাইনের কালাদান মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে অঞ্চলটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের বাধ্য করে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে শক্তি বাড়াতে চাইছে জান্তা সরকার। তারা চাইছে, যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দ্রুত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে নাস্তানাবুদ করা।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর