বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের জামাত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত : ৬ লাখ মানুষের ঈদের নামাজ আদায়

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫
  • ১২ সময় দেখুন

কিশোরগঞ্জ, ৩১ মার্চ ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের জামাত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের ১৯৮তম ঈদ জামাতে ছয় লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 

জামাতে ইমামতি করেন ১৫ বছর আগে বাদ দেওয়া ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লি কয়েকগুণ বেড়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

 

কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে শোলাকিয়ায় এবার ছয় লাখের বেশি মুসুল্লির উপস্থিতিতে জনস্রোতে পরিণত হয়ে যায় ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার মাঠ। মাঠের ভেতরের কাতার উপচে বাইরে রাস্তাঘাট বাসা বাড়ির অলিগলিতেও ছড়িয়ে যায় জামাত। নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।

 

সোমবার ভোরের আলো ফোটার আগেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশপাশের এলাকা। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসুল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুসুল্লিদের খানিকটা দেরি হয়। তারপরও সকাল ৯টার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ছাতা, লাঠিসোঁটা, দিয়াশলাই কিংবা লাইটার নিয়ে মাঠে প্রবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে এসব রেখে মুসুল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশ করতে হয়েছে।

 

ভোর থেকেই মুসুল্লিদের ঢল শুরু হয় জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরের এ ঈদগাহ মাঠে। ঈদগাহমুখী সব রাস্তাঘাট মুসুল্লিদের চলাচলে কয়েক ঘণ্টার জন্য শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামাত শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। মুসুল্লিদের অনেককে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাসাবাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হতে দেখা যায়। ছয় লাখের বেশি মুসল্লি জামাতে অংশ নেন।

 

নামাজ শুরুর আগে মুসুল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঈদগাহ কমিটির লোকজন। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বিজিবি, র‌্যাব সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। মাঠে ছিল চারটি ড্রোন ক্যামেরা ও বাইনোকোলারসহ ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। ঢাকা থেকে এসেছিল বোম্ব ডিসপোজাল টিম। মাঠ ও শহরসহ প্রবেশপথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাঠে স্থাপিত ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে দুরবিন নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। সার্বক্ষণিক পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম কাজ করেছে।

 

শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। ঈদগাহ এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল টিম এবং অগ্নিনির্বাপক দলও মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন বিপুলসংখ্যক স্কাউট সদস্য। প্রত্যেক মুসুল্লিকে মেটালডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে তারপর মাঠে প্রবেশ করানো হয়।

 

মাঠের সুনাম ও নানা জনশ্রুতির কারণে ঈদের কয়েক দিন আগেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসুল্লিদের সমাগম ঘটে। তাদের অনেকেই উঠেছিলেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মিম্বরে। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। নামাজ শেষে জামাতে আসা যাত্রীদের নিয়ে আবার গন্তব্যে ফিরে যায় ট্রেন দুটি। দেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হস্ত, কারু ও নানারকম শিল্পের মেলা মুসুল্লিদের জন্য ছিল অন্যতম আকর্ষণের বিষয়।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর