ঢাকা,০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের শহীদ স্মারক মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোনো কাজ না করতে অনুরোধ করছি।
তিনি বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সুন্দর বাংলাদেশ পাওয়া গেছে। যেকোনো অসঙ্গতিপূর্ণ কাজে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, তাদের রক্তকে অপমান করা হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর কিছু করণীয় আছে বলে আমরা মনে করি। আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো জাতি যেমন মুক্তি পেয়েছে, সবচেয়ে নির্যাতিত রাজনৈতিক দলটিও একইভাবে মুক্তি পেয়েছে। সুতরাং এই প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা প্রয়োজন। আমরা শহীদ পরিবারগুলোর কাছে গিয়েছি তাদের প্রতি সম্মান দিতে এবং তাদের থেকে দোয়া নিতে। কারণ তারা সৌভাগ্যবান, তাদের পরিবার দেশের জন্য জীবন দিয়েছে।’
কিছু ইতিহাস মানুষের জন্য হয় আনন্দের, কিছু হয় বিষাদের- এ কথা উল্লেখ করে জামায়াতে আমির বলেন, ‘আর কিছু হয় গৌরবের। বিশেষত, যারা দেশের জন্য জীবন দেন, অতীতেও দিয়েছেন, ৪৭ সালে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ৭১ এ এবং সর্বশেষ ২৪ এর জুলাইয়ে। তাদের ইতিহাসটা গৌরবের।’
সাংবাদিকরাও ফ্যাসিবাদের থাবা থেকে মুক্ত ছিলেন না বলে মন্তব্য করেন ডা. শফিবুর রহমান। বলেন, ‘সেসময় তাদেরও জীবন দিতে হয়েছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। বিদেশে বসে যারা বাক ও কলমযুদ্ধ চালিয়েছেন, দেশের মাটিতে তাদের পরিবারকে হেনস্তা করা হয়েছে, জেলে পুরে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নারীদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। যারা নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে আমাদের আজকের এই পরিবেশটি উপহার ছিল, তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘কিছু লোক নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নেয়ার মতো অপকর্মে লিপ্ত হয়। তারা এটিকে তাদের পেশা মনে করে। একটা সময় তা নিজের অধিকার বলেই মনে করে, আর জনগণকে নিজের প্রজা মনে করে রাজা হয়ে বসে। কিন্তু গাছের ডালে যখন ঝাঁকুনি দেয়া হয়, ডালের রাজারা তখন উড়ে গিয়ে পড়ে।’
ফ্যাসিস্টদের পরিণতি সম্পর্কে জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘অতীতের ফ্যাসিস্ট শাসকদের নাম ধর্মগ্রন্থেও উঠে এসেছে। একই পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হয়। দুঃখের বিষয়, ফ্যাসিস্টরা ইতিহাস পড়ে, কিন্তু তার থেকে শিক্ষা নেয় না।’
আমাদের দেশের ইতিহাস বিস্তৃতির ইতিহাস, বিকৃতির ইতিহাস। দেশের ইতিহাস অনেকে যার যার মতো রচনা করেছেন। এমন মন্তব্য করেন ডা. শফিকুর রহমান। বলেন, ‘আমরা এখনো পরিপূর্ণভাবে ইতিহাস রচনা করতে পারিনি। জুলাই আন্দোলনে আহতরা এখন হতাশায় পড়ে যাচ্ছেন। এ সময় জাতির পক্ষ থেকে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার।’
জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সুন্দর বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই রাজনৈতিক দল ও এর অংশীজনদের বলতে চাই, বিপ্লবের সাথে অসংগতিপূর্ণ কোনো কাজ আপনারা করবেন না। যদি করেন, তাহলে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, তাদের রক্তকে অপমান করা হবে। আর যারা জীবিত রয়েছেন, তারা ভীষণ কষ্ট পাবে ও অভিশাপ দিবে।’
Leave a Reply