মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৪ অপরাহ্ন

ছাত্র নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান, কোনো মাস্টারমাইন্ড বিশ্বাস করি না : জামায়াত আমির

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৩৩ সময় দেখুন

কক্সবাজার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রায় ১৫ বছর পর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সাড়ে ১৫ বছর রাজনৈতিক নেতৃত্বে আন্দোলন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটানো যায়নি, কিন্তু চব্বিশে ছাত্রদের নেতৃত্বে জাতি ফ্যাসিজম বিদায় করেছে। এটাই সত্য, তবে এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড বিশ্বাস করি না।

 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব, সেটা ছিল আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। একটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমরা এখনো পেলাম না।’

 

এ সময় জামায়াতের আমির বিগত সময়ে নিজ দলের প্রতি অবিচারের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আইনের অঙ্গনে এসে যারা বেআইনি কর্মকাণ্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি দিয়েছে, আওয়ামী লীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিল। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে।’

 

তারা প্রতিশোধে বিশ্বাস করেন না বলে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। বিশেষ করে ২৪-এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার, তারপর অন্য কাজ।’

 

তার বক্তব্যে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকারী প্রজন্মকে সম্মান জানান ডা. শফিকুর রহমান। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটা ফ্যাসিজমের ওপর দিয়েছে এবং জাতি সফল হয়েছে।’

 

আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, ‘অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবি করে৷ আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড, তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। মহাপরিকল্পনাকারী মহান রাব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করি না।’

 

দেশে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু নিয়েও কথা বলেন জামায়াতের আমির। তারা মেজরিটি ও মাইনরিটি একেবারেই মানেন না বলে জানান তিনি। তার মতে, বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে, তারা এদেশের মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক।

 

কিন্তু সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিল মন্তব্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এখানে মেজরিটি মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের ভাই-বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা-জমি দখল করা হয়েছে, ইজ্জতের ওপর হাত দেয়া হয়েছিল, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর।’

 

এসব অপকর্মের সঙ্গে জামায়াতের কেউ জড়িত নন দাবি করে জামায়াত আমির ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ করেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্ট করে নাম-ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন।’ ন্যায়বিচার তাদের হাতে তুলে দেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের বক্তব্য প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জামায়াত আমির। তাদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘পুলিশ ভাইদের বলছি বেনজিরের ফাঁদে পা দিবেন না।’

 

শনিবার সকাল আটটায় কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজার জেলা শাখার আয়োজনে এ সম্মেলন শুরু হয়।

 

জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক মন্জু।

 

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাহিদুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুফতি হাবিবুল্লাহ, অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামসুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুর রহিম নুরী।

 

দীর্ঘদিন পর বিশাল কর্মী সম্মেলনে একত্র হয়ে উচ্ছ্বসিত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। গতরাত থেকে কুতুবদিয়া ও টেকনাফ থেকে প্রচুর নেতাকর্মী চলে আসেন। কর্মী সম্মেলন ঘিরে রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সেজেছিল পুরো শহর।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর