শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন

গাজা আমাদের নয়, গাজা ফিলিস্তিনিদের : ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট

রিপোর্টার নাম
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ সময় দেখুন

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছেছে, যখন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

 

এই প্রস্তাবটি ট্রাম্পের ‘শতাব্দী চুক্তি’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উঠে আসে, যা মূলত ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার অংশ ছিল। কিন্তু এ পরিকল্পনাটি তীব্রভাবে বিতর্কিত এবং ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলমার্ট বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে যে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকা তাদের হাতে তুলে দেবে, কিন্তু আমরা তা করতে পারি না, কারণ গাজা আমাদের নয়। গাজা ফিলিস্তিনিদের।

 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা তিনি স্বাগত জানাবেন, তবে তার শর্ত একটাই- গাজা অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের দ্বারা এবং ফিলিস্তিনিদের জন্যই পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এর মাধ্যমে তিনি স্পষ্টতই ইসরায়েলের অবস্থান তুলে ধরেছেন, যা গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

 

উল্লেখ্য, এহুদ ওলমার্ট, যিনি ২০০৬ সালে লিকুদ পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে নিজের রাজনৈতিক পথ তৈরি করেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার বক্তব্যে, তিনি গাজা উপত্যকাকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে দেখা না হওয়ার ব্যাপারে এক প্রকার দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।

 

এটি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি বিশাল সংকেত, যেখানে একদিকে ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে অঞ্চলটি দখল করার উদ্যোগ থাকলেও, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবিও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

 

ট্রাম্পের ‘শতাব্দী চুক্তি এবং গাজার ভবিষ্যৎ

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শতাব্দী চুক্তি’ পরিকল্পনা মূলত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া একটি নতুন দিক দিতে চেয়েছিল, তবে এটি একেবারেই বিতর্কিত হয়ে ওঠে। ট্রাম্পের প্রস্তাবের মধ্যে ছিল, গাজার ২১ লাখ ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র পুনর্বাসিত করার এবং এই অঞ্চলটি ইসরায়েলের অধীনে আনার প্রস্তাব।

 

তবে এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং আরব দেশগুলো দ্বারা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাদের মতে, গাজাকে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখা উচিত এবং এটি ইসরায়েলের অধীনে থাকবে না। ফিলিস্তিনিরা গাজার স্বাধীনতা এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিরোধ করে যাচ্ছে।

 

এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি গাজার বাসিন্দাদের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে তারা এই অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারবেন। এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে গাজার ভূখণ্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করেছে।

 

যদিও এই প্রস্তাব কিছু মাত্রায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নেওয়া হলেও, এটি শুধু রাজনৈতিক সুবিধার দিকে ফোকাস করেছে, যা ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও ভবিষ্যতের প্রশ্নে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

 

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

 

গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে বহু দেশ ও সংস্থা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। অনেকেই মনে করছেন, গাজার পরিস্থিতি শুধু একটি ভূখণ্ডগত সমস্যা নয়, বরং এটি একটি মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটও। এখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি আক্রমণ এবং সীমান্ত অবরোধের মধ্যে জীবনযাপন করছে, যা তাদের মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারকে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করছে।

 

বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব দেশগুলো এই সংকটের সমাধানে বারবার একে অপরের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে, তবে কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো আসেনি। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব বৈশ্বিক উদ্যোগ ছিল, তার বেশিরভাগই ভেস্তে গেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া এখনো অনেকটা স্থবির অবস্থায় রয়ে গেছে।

 

ওলমার্টের বক্তব্য, যেখানে তিনি গাজা ফিলিস্তিনিদের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করছেন, তা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি মধ্যপ্রাচ্যের একটি অব্যাহত সংকটের অবস্থা তুলে ধরেছে, যেখানে একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপন এবং জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য আরও বহুমুখী ও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

 

এদিকে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকেই গাজার বিষয়ে আপোষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন না। এই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ভবিষ্যতে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর