ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ১৮ ডিসেম্বের ২০২৪ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): মস্কোয় বিস্ফোরণে মৃত রাশিয়ার জেনারেল ইগর কিরিলোভ। তিনি ২০১৭ সলে রাশিয়ার পারমানবিক, রাসায়নিক, জৈবিক অস্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ভুল তথ্য প্রচারে তার খ্যাতি ছিল।
মস্কোয় রিয়াজনকি প্রস্পেক্ট আবাসনের বাসিন্দারা মঙ্গলবার একটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন।
তারপর জানালা দিয়ে দেখতে পান দুই ব্যক্তির মরদেহ পড়ে আছে। রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি পরে জানায় ওই দুই মরদেহের মধ্যে একজন সিনিয়র জেনারেল ইগর কিরিলোভ ও তার সহকারী ইলিয়া পলিকারপভের। জার্মানির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাশিয়া বিশেষজ্ঞ হানস-হেনিং শোয়েডা বলেছেন, তিনি মনে করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সমর্থনে কিরিলোভ মিথ্যা প্রচার করতেন। তিনি চাইতেন, রাশিয়ার ভিতরে ও বাইরের মানুষ যেন বিশ্বাস করে, এই আক্রমণ যথার্থ। ইউক্রেন ভয়ংকর পরিকল্পনা করেছে। তাই রাশিয়া এই আক্রমণ করেছে।
তিনি বলেছেন, ‘মিথ্যা প্রচার চালানোর ক্ষমতার জন্যই সম্ভবত ইগর কিরিলোভ ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের নজরে পড়েন। তিনি কোনো বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন না।
তিনি কোনো অস্ত্র মোতায়েনের দায়িত্বে ছিলেন না। তাই অন্যথায় তাকে নিয়ে ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ থাকার কথা নয়।’
কিয়েভের রাজুমকভ সেন্টারের পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের প্রধান ওলেক্সি মেলনিক বলেছেন, ‘প্রচুর মিডিয়া এসবিইউ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীই ওই বিস্ফোরণের পিছনে ছিল। যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে এটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলা যাবে না।’
তার যুক্তি, ‘যখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়, তখন সক্রিয় সেনা কর্তার বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইগর কিরিলোভ সোচ্চার ছিলেন। তিনি অনেকগুলো ভাষণে অভিযোগ করেন, আমেরিকা ইউক্রেনে জৈবিক অস্ত্র বানাবার জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপন করছে। ওই অস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে।
তিনি বলেছিলেন, আমেরিকার পরিকল্পনা হলো, ইয়েলো ফিভারের ভাইরাসবাহী মশা তারা ড্রোনের মাধ্যমে রাশিয়ার সেনা যেখানে আছে সেখানে ছেড়ে দিতে চায়। তিনি এই অভিযোগের সমর্থনে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেননি। তিনি এটাও বলেছিলেন, ইউক্রেন থেকে আসা পাখিই রাশিয়ায় বার্ড ফ্লু ছড়াচ্ছে।
মস্কো ও কিয়েভের প্রতিক্রিয়া
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আবাসনে ঢোকার মুখে একটি ইলেকট্রিক স্কুটারে বোমা রাখা হয়েছিল। ইগর ও তার সহকারী যখন বেরোচ্ছিলেন তখন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কিরিলোভের বাড়ির কাছে একটি গাড়িতে নজরদারি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার একটু আগে সেই গাড়িটি আসে। এভাবেই তার গতিবিধির ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছিল।
তদন্তকারী কমিটি সন্ত্রাসবাদ, হত্যা, বেআইনি অস্ত্রপাচারের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা শুরু করেছে। সূত্র উদ্ধৃত করে রাশিয়ার মিডিয়া জানিয়েছে, তাদের সন্দেহ ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এই হত্যার পিছনে আছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘কিরিলোভ বহু বছর ধরে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের অপরাধের ঘটনা সামনে এনেছেন।’ ডুমার প্রতিনিধি ইয়েভগেনি রেভেঙ্কো বলেছেন, ‘ইউক্রেনের শাসকদের অপরাধপ্রবণ চরিত্র সামনে এলো।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পরামর্শদাতা মিখাইলো পোডোলিয়াক এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘বিস্ফোরণের সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ বিস্ফোরণের একদিন আগে সিক্রেট সার্ভিস অফ ইউক্রেন(এসবিইউ) কিরিলভের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলে, তিনিই ইউক্রেনের সেনার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
Leave a Reply