ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েই দিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, তার দল নতুন নেতা নির্বাচন করার পর তিনি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন।
সোমবার অটোয়ায় নিজ বাসভবনের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে জাস্টিন ট্রুডোর এই ঘোষণা দেন। লিবারেল পার্টির এই নেতা ৯ বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেছেন, নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি পদত্যাগের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার সফলতার পেছনে পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। গত রাতে নৈশভোজের সময় সন্তানদের কাছে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
কানাডার রাজধানী অটোয়ায় এ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, কয়েক মাস ধরে বাধার কারণে পার্লামেন্ট পুরোপুরি অচল হয়ে আছে। একই সঙ্গে কয়েক মাস ধরে উৎপাদনশীলতার ঘাটতি রয়ে গেছে। এখন নতুন করে শুরু করার সময়। কানাডার রাজনীতিতে উত্তাপ কমিয়ে আনার জন্য তা দরকার।
তিনি বলেন, প্রতি সকালে যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জেগেছি, কানাডিয়ানদের ভিন্ন মত মেনে নেওয়ার সক্ষমতা, উদারতা ও সংকল্প আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমি এই দেশের জন্য, আপনার জন্য লড়াই করেছি।
ট্রুডো আরও বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ‘জটিল’ সময়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য পার্লামেন্টে একটি নতুন শুরু দরকার। আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেছেন তিনি।
ট্রুডো ২০১৫ সালে লিবারেল পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রথমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর প্রায় এক দশক ধরে দেশটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। সর্বশেষ ২০২১ সালে ট্রুডোর নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে লিবারেল পার্টি।
আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে কানাডায় নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে দলীয় নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন ট্রুডো।
পদত্যাগের জন্য বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের মধ্য থেকেও ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়ছিল। এখন ট্রুডোর উত্তরসূরি কে হতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই তালিকায় ট্রুডোর সরকারের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মার্ক কারনির নাম আলোচনায় রয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা অনেক কমে আসে। তার সরকার কয়েক দফা অনাস্থা ভোট কোনো মতে এড়াতে সক্ষম হলেও সমালোচকরা তাকে একাধিকবার পদ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৫ সালের অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রুডো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে পড়েছেন তিনি, যা তাকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণ করেই কানাডার পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
ট্রাম্পের এই হুমকির বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, সে বিষয়ে মতভেদের জেরে ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন উপ প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় প্রথম প্রকাশ্য বিদ্রোহের ঘটনা। এরপর থেকে পদত্যাগের জন্য ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়তে থাকে।
Leave a Reply