ঢাকা, ০৯ এপ্রিল ২০২০ইং (ঢাকা টিভি রিপোর্ট): দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম কেন্দ্রস্থল উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল। কিন্তু দিনভর এখানে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন সেই চিকিৎসকরা ঠিকভাবে খাবারও খেতে পারছেন না। কারণ নিরাপত্তার স্বার্থে করোনার রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিতদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানকান বাবুর্চি ভয়ে পালিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, অন্যসহ স্টাফরাও পালিয়ে যাওয়ায় এমন অমানবিক সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে সেখানকার ৫৬ চিকিৎসকের। এই দুর্যোগে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াকে চিকিৎসকরা হতাশাজনক বলছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একজন চিকিৎসক বলেন, একে তো আমরা হাসপাতালে অনেক চাপের মধ্যে কাজ করি, তারওপর দিনের পর দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় না। এরপর হোটেলে ফিরে তিন বেলার সাধারণ খাবারটা যদি আপনি না পান, সেটা কতটা হতাশাজনক একটু ভাবেন। কেবল বিস্কুট আর পাউরুটি খেয়ে কত থাকা যায়?’
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবস্থান করছিলেন যে হোটেলে সেই হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আসিফ বাবু বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় থেকে কেবল খাবার ব্যবস্থা নয়, কোন সুবিধাই দেয়া যাচ্ছিল না হোটেলের অতিথিদের। হোটেলের শুধু রাঁধুনি নয়, আমার ৩৬জন স্টাফের সবাই পালিয়ে গেছে। বিশেষ করে ২৭শে মার্চের পর থেকে আর একজন স্টাফও ছিল না, এমনকি টেলিফোন অপারেটরও না, কেবল আমি একাই আছি।’
তিনি বলেন, যেহেতু ডাক্তাররা প্রতিদিন করোনাভাইরাসের রোগীদেরই চিকিৎসা করেন তাই স্টাফরা সবাই ভয় পেয়েছি। আর আশপাশের লোকেরা তাদের আরও ভয় দেখিয়েছে। যে কারণে এরা বলতে গেলে এক রাতের মধ্যেই সবাই চলে যায়।
জানা গেছে, হাসপাতালটিতে কর্মরত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়ি না গিয়ে ভিন্ন একটি জায়গায় অবস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
কিন্তু হাসপাতালে নিয়মিত দায়িত্বের পর ফিরে এসে খাবারের ব্যবস্থা না থাকাকে রীতিমত ‘অমানবিক’ এবং ‘হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন সেখানে অবস্থানরত একজন চিকিৎসক। এরপর থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছাসেবী এক ক্যাটারিং সার্ভিসের সরবরাহ করা খাবার খাচ্ছেন তারা।
এদিকে এমন অবস্থায় বুধবার তাদের অন্য আরেকটি আবাসিক হোটেলে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে চিকিৎসকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেয়া হলেও, এখন ওই হোটেলে থাকছেন হাসপাতালের সেবাকর্মীরা।
কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, প্রায় তিনদিন খাবারের কষ্ট করার পর একদিন অনলাইনে তারা একটি পোস্ট দেখতে পান। পোস্টে বলা হয়, চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী একটি দল ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থানরত যেকোনো চিকিৎসকের জন্যে সুলভ মূল্যে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করছেন। এরপর অনলাইনেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা।
চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী দলটির একজন সদস্য ডা. আয়েশা হোসেন সাদিয়া বলছিলেন, ডাক্তাররা যোগাযোগ করার পর থেকে তারা গত ২৭ শে মার্চ থেকে খাবার সরবরাহ করছেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে সরকার অনেক কিছু করছে, কিন্তু সাধারণ নাগরিকদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ দুপুর বা রাতের খাবারের জন্য তারা মাত্র ৮০ টাকা নেন। যদিও সাধারণ ছুটির মধ্যে খাবার তৈরি আর পরিবহন মিলে তাদের খরচ আরও বেশি হয়।
Leave a Reply